শেয়ার বাজার

হজের দিনগুলোতে যা করণীয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: রবিবার, ২৮ মে ২০২৩

হজের দিনগুলোতে  যা করণীয়

হজের প্রথম দিন

[মিনার উদ্দেশে যাত্রা]

৮ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ পর্যন্ত এ পাঁচ দিনকে হজের দিন বলা হয়। আপনি যদি তামাত্তু হজ পালনকারী হয়ে থাকেন তাহলে আজ আগের মতো আবার ইহরাম বেঁধে নিন। তারপর এভাবে ইহরামের নিয়ত করুন : ‘হে আল্লাহ আমি তামাত্তু হজ করতে ইচ্ছা করেছি, আপনি এ হজ আমার জন্য সহজ করে দিন এবং আমার পক্ষ থেকে কবুল করুন।’ নিয়তের সঙ্গে সঙ্গে তিনবার তালবিয়া একটু উচ্চস্বরে পড়ুন। (মহিলারা নিচু স্বরে পড়ুন)। যারা কিরান বা ইফরাদ হজ পালন করার নিয়ত করেছেন, তারা তো আগে থেকেই ইহরামের অবস্থায় আছেন, কাজেই নতুন করে ইহরাম বাঁধতে হবে না। ৮ জিলহজ সকালে ইহরাম বাঁধা অবস্থায় মিনার উদ্দেশে রওনা হবেন। আজকের জোহর, আসর, মাগরিব, এশা এবং ৯ জিলহজের ফজরের নামাজ মিনায় আদায় করা এবং রাতে মিনায় অবস্থান করা সুন্নাত।

হজের দ্বিতীয় দিন

[আরাফায় অবস্থান]

হজের দ্বিতীয় দিন ৯ জিলহজ আরাফায় অবস্থান ফরজ। ফজরের নামাজ মিনায় পড়ে আরাফার ময়দানের দিকে রওনা করতে হয়। প্রয়োজনে ফজরের আগে রাতেও আরাফার উদ্দেশে রওনা করা যাবে। আরাফার ময়দানে দুপুর ১২টার পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করতে হবে। আরাফার ময়দানে দোয়া কবুল হয়। সুতরাং এ সময় সবাইকে দোয়ায় মগ্ন থাকা উচিত। আরাফার ময়দানে জাবালে রহমতের কাছাকাছি অবস্থান করা ভালো। জোহর এবং আসরের নামাজ মসজিদে নামিরায় জামাতের সঙ্গে নির্দিষ্ট শর্তানুসারে আদায় করা উত্তম। তবে ওই জামাতে শরিক হওয়া সম্ভব না হলে যথাসময়ে জোহরের ওয়াক্তে জোহর এবং আসরের ওয়াক্তে আসর নিজ নিজ তাঁবুতে আজান-ইকামতসহকারে জামাতের সঙ্গে পড়ুন।

মুজদালিফায় অবস্থান

মিনা ও আরাফার মাঝখানে অবস্থিত ময়দানের নাম মুজদালিফা। এখানে ১০ জিলহজ রাত (৯ জিলহজ দিবাগত রাত) অতিবাহিত করা হাজিদের জন্য জরুরি। মুজদালিফায় পৌঁছে এশার ওয়াক্ত হলে এক আজান ও এক ইকামতে প্রথমে মাগরিবের ফরজ তারপর এশার ফরজ পড়ুন এরপর মাগরিবের ও এশার সুন্নাত এবং বেতর পড়ুন। মাগরিব ও এশার নামাজ পড়ার পর সুবহে সাদিক পর্যন্ত মুজদালিফায় অবস্থান করা সুন্নাতে মুআক্কাদাহ্। সুবহে সাদিক থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত অবস্থান ওয়াজিব। এ রাতে জাগ্রত থাকা ও ইবাদতে নিমগ্ন হওয়া মুস্তাহাব।

হজের তৃতীয় দিন

[পাথর নিক্ষেপ, কুরবানি, চুল মুণ্ডন ও তাওয়াফ]

হজের তৃতীয় দিন ১০ জিলহজ মিনায় পৌঁছার পর এ দিনের চারটি কাজ ধারাবাহিকভাবে পালন করতে হবে-

পাথর নিক্ষেপ করা : এই দিনের প্রথম কাজ হলো জামারায় আকাবায় গিয়ে সাতটি পাথর নিক্ষেপ করা (ওয়াজিব)। পাথর নিক্ষেপের নিয়ম হচ্ছে-পাথর নিক্ষেপের সময় মিনাকে ডান দিকে রেখে দাঁড়ান। তর্জনী ও বৃদ্ধাঙ্গুলি দ্বারা পাথর ধরে নিক্ষেপ করুন। প্রথম পাথর নিক্ষেপের আগমুহূর্ত থেকে তালবিয়া পড়া বন্ধ করে দিতে হবে। পাথর নিক্ষেপের সময় বলুন : বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার।

কুরবানি করা : এই দিনের দ্বিতীয় কাজ হলো দমে শোকর বা হজের শোকরিয়া স্বরূপ কুরবানি করা (ওয়াজিব)। নিজ হাতে করুন কিংবা কাউকে পাঠান; কিন্তু জবাই হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হোন।

চুল মুণ্ডন বা কর্তন করা : এই দিনের তৃতীয় কাজ হলো হলক বা কসর করা। (চুল মুণ্ডন বা কর্তন) এটি ওয়াজিব। কুরবানি করার পর পুরো মাথার চুল মুণ্ডন করে ফেলুন। মুণ্ডনকারীদের জন্য হুজুর পাক (সা.) তিনবার দোয়া করেছেন। তাই এতে ফজিলত বেশি।

তাওয়াফে জিয়ারত : এ দিনের চতুর্থ কাজ হলো তাওয়াফে জিয়ারত (ফরজ)। এটা হজের শেষ রুকন। মিনায় উপরোক্ত কাজগুলো সেরে হাজিরা মক্কা শরিফ গিয়ে তাওয়াফ-ই-জিয়ারত করবেন। এ তাওয়াফে ইজতিবা নেই। ১০ তারিখে সম্ভব না হলে ১১ বা ১২ তারিখের সূর্যাস্তের আগে অবশ্যই এ তাওয়াফ করতে হবে। যারা মক্কা থেকে ৮ জিলহজ আসার আগে একটি নফল তাওয়াফের সঙ্গে সায়ী করে আসেনি তাওয়াফে জিয়ারতে তাদের অবশ্যই সায়ী করতে হবে। তাওয়াফে জিয়ারতের কোনো বদলা নেই, এ তাওয়াফ করতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।

হজের চতুর্থ দিন

[মিনায় রাতযাপন এবং পাথর নিক্ষেপ]

১১ জিলহজ মিনায় রাতযাপন সুন্নাত। এদিন মিনায় তিন শয়তানকে পাথর মারা ওয়াজিব। দুপুরের পর প্রথমে জামারায়ে সুগরা, (মসজিদে খাইফের সন্নিকটে) অতঃপর জামারায়ে উসতা, সর্বশেষ জামারায়ে আকাবায় ৭টি করে মোট ২১টি পাথর নিক্ষেপ করতে হবে। প্রত্যেকটি পাথর নিক্ষেপের সময় তাকবির বলবেন।

হজের পঞ্চম দিন

[মিনায় রাতযাপন এবং পাথর নিক্ষেপ]

১২ জিলহজেও আগের দিনের মতো তিন জামারায় পাথর নিক্ষেপ করা ওয়াজিব। অনেকেই ১২ জিলহজ তাড়াতাড়ি মক্কায় ফিরে যাওয়ার জন্য সূর্য মাথার ওপর উঠার আগেই পাথর নিক্ষেপ করে ফেলেন, অথচ এরূপ করা নাজায়েজ। মনে রাখতে হবে, সূর্য মাথার ওপর থেকে কিছুটা ঢলে যাওয়ার পর পাথর নিক্ষেপ করতে পারবেন। ১২ জিলহজ পাথর নিক্ষেপ করে মক্কায় ফিরে যাওয়া জায়েজ, তবে ১৩ জিলহজ পাথর নিক্ষেপ করে তারপর মক্কায় ফিরে যাওয়া উত্তম। ১২ জিলহজ পাথর নিক্ষেপ করে মক্কায় ফিরতে চাইলে সূর্যাস্তের আগেই মিনা থেকে বের হয়ে যাবেন। সূর্যাস্তের পর ফিরা মাকরুহ।

মক্কায় পৌঁছার পর বিদায়ী তাওয়াফ ছাড়া হজের আর কোনো জরুরি কাজ বাকি নেই। হজ আদায়ের তাওফিকদানের জন্য আল্লাহ পাকের শোকর, নফল তাওয়াফ, উমরাহ ও অন্যান্য ইবাদত করতে থাকুন।

বিদায়ী তাওয়াফ

মক্কা শরিফ থেকে বিদায়ের আগে বিদায়ী তাওয়াফ (ওয়াজিব) করুন। মাকামে ইবরাহিমে দুরাকাত নামাজ পড়ে মূলতাযাম, কাবার দরজা ও হাতিমে দোয়া করুন; যমযমের পানি পান করেও দোয়া করুন এবং বিয়োগ-বিরহের বেদনা দিয়ে কাবা ঘর থেকে বিদায় নিন। তাওয়াফে বিদা না করলে দম দিতে হবে।

Dummy Ad 1

ইসলামি ধর্মীয় বিধান প্রণয়নে ১৩ গবেষক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৩ জানুয়ারি, ২০২৪

ইসলামি ধর্মীয় বিধান প্রণয়নে ১৩ গবেষক

বার্তাবেলা ডেস্ক: দ্বিতীয় শতাব্দীর শুরু থেকে চতুর্থ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়কাল হলো ইজতিহাদ (ধর্মীয় বিধান প্রণয়নে গবেষণামূলক প্রয়াস)-এর স্বর্ণযুগ। ইজতিহাদের ঊষালগ্নে ১৩ জন মুজতাহিদ ছিলেন। তাদের সংক্ষিপ্ত জীবনালেখ্য উল্লেখ করা হলো

১. ইমাম সুফিয়ান বিন উয়াইনা (রহ.), [জন্ম : ২৫ ডিসেম্বর, ৭২৫ খ্রিস্টাব্দ, মৃত্যু : ২৫ ফেব্রুয়ারি, ৮১৫ খ্রিস্টাব্দ]

তিনি একজন বিদগ্ধ মুহাদ্দিস, হাফেজ এবং ফকিহ (ইসলামি আইন বিশেষজ্ঞ) এবং মুহাদ্দিসদের মধ্যে অগ্রগণ্য, যারা নবী কারিম (সা.)-এর হাদিস বিন্যস্ত ও সম্পাদনার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কাজ করেছেন। তিনি সেই অন্যতম ব্যক্তি ছিলেন, যাকে ইমাম আবু হানিফা (রহ.) কুফায় হাদিস বর্ণনার সুযোগ দিয়েছিলেন এবং তার মুহাদ্দিস হওয়ার নেপথ্যে ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর নিরলস প্রচেষ্টা ও প্রয়াস সর্বত্র স্বীকার্য। তার অন্যতম কৃতিত্ব হলো, তিনি কোরআন শরিফের আক্ষরিক এবং শব্দার্থিক চিহ্নগুলোকে কাগজের পাতায় নিয়ে এসেছেন। তার ইজতিহাদ ও ফিকাহ সংক্রান্ত তথ্য জানার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, তিনি ফিকাহ শাস্ত্রের অন্যতম ব্যক্তিত্ব ইমাম শাফেয়ি (রহ.)-এর শিক্ষক ছিলেন।

২. ইমাম মালেক বিন আনাস (রহ.), [জন্ম : ৭১১ খ্রিস্টাব্দ, মৃত্যু : ৭৯৫ খ্রিস্টাব্দ]

তিনি ‘ইমামু দারিল হিজরত’ উপাধিতে সমাদৃত এবং ইমামে মদিনা ও ইমামে আহলে হেজাজ উপাধিতে সুপরিচিত। এই মুজতাহিদ (গবেষক, প্রণেতা) ও ফকিহ প্রথমে হাদিস ও আইনশাস্ত্রের জ্ঞান অর্জন করেন প্রথমে রাবিয়া রায়ি (রহ.)-এর থেকে, তারপর ইবনে হরমুজ (রহ.)-এর কাছ থেকে। তার শিক্ষকদের মধ্যে অন্যতম হলেন ইমাম ইবনে শিহাব যুহরি (রহ.)। ‘আল মুদাওওয়ানাতুল কুবরা’ ও ‘মুয়াত্তা মালেক’ নামের দুই বিখ্যাত কিতাবের রচয়িতা এই ফকিহ মাজহাবে মালেকির প্রবর্তক।

৩. ইমাম হাসান বসরি (রহ.), [জন্ম : ৬৪২ খ্রিস্টাব্দ, মৃত্যু : ৭২৮ খ্রিস্টাব্দ]

নবী কারিম (সা.)-এর ঘরে উম্মাহাতুল মুমিনিন উম্মে সালমা (রা.)-এর কোলে বড় হওয়া এই ফকিহের আসল নাম হাসান বিন ইয়াসার। তার মা ছিলেন হজরত উম্মে সালমা (রা.)-এর ক্রীতদাসী। তিনিই নাম রাখেন ‘হাসান’ এবং কোনো কোনো বর্ণনায় এসেছে, হজরত উমর ফারুক (রা.) তার নামকরণ করেছেন। তার পিতা ইয়াসার ছিলেন হজরত যায়েদ বিন হারেস (রা.)-এর ক্রীতদাস। তিনি ‘ইমামুল আউলিয়া’ ও ‘ইমামুল মুহাদ্দিসিন’ উপাধিতে ভূষিত ছিলেন। প্রত্যেক যুগের আলেমরা ইমাম হাসান বসরি (রহ.)-কে তাফসির, হাদিস, ফিকহ ও তরিকতের ইমাম হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। হজরত বিলাল ইবনে আবি বুরদা (রহ.) বলেন, ‘আমি হাসান বসরির চেয়ে সাহাবায়ে কেরামের মতো সাদৃশ্যপূর্ণ আর কাউকে পাইনি।’

৪. ইমামে আজম আবু হানিফা (রহ.), [জন্ম : ৬৯৯ খ্রিস্টাব্দ, মৃত্যু : ৭৬৭ খ্রিস্টাব্দ]

হজরত ইমাম আজম (রহ.)-এর নাম নোমান এবং উপাধি আবু হানিফা। তিনি ৮০ হিজরিতে ইরাকের কুফা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম সাবিত, পিতামহ নোমান বিন মারযুবান ছিলেন কাবুলের সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের অন্যতম। তার প্রপিতামহ মারযুবান পারস্যের একটি অঞ্চলের শাসক ছিলেন। তার পিতামহ পিতা সাবিতকে শৈশবে হজরত আলি (রা.)-এর খেদমতে নিয়ে আসেন। হজরত আলি (রা.) তার জন্য বরকতের দোয়া করেন। সেই দোয়া এমনভাবে কবুল হয় যে, ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর মতো মহান মুহাদ্দিস, ফকিহ ও আবিদ ও জাহিদ ব্যক্তিত্বের জন্ম হয়। তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি সুসংহত পদ্ধতিতে আইনশাস্ত্রের (ফিকহ) ভিত্তি স্থাপন করেছেন।

তিনি মাজহাবে হানাফির প্রবর্তক। হজরত মালেক বিন আনাস (রা.) বলেন, ‘ইমাম আবু হানিফা (রহ.) ৬০ হাজার মাসয়ালা প্রণয়ন করেছেন।’ হজরত আবু বকর বিন আকিক বলেন, ‘ইমাম আবু হানিফা ৫ লাখ মাসয়ালা প্রণয়ন করেছেন।’ খতিব খাওয়ারজিমি বলেন, ‘ইমাম আবু হানিফা ৩ লাখ মাসয়ালা প্রণয়ন করেছেন। তন্মধ্যে ৩৮ হাজার ইবাদত-বন্দেগি সংশ্লিষ্ট এবং অবশিষ্ট মাসয়ালা লেনদেন ও আচার-আচরণ ইত্যাদি সংশ্লিষ্ট।’

৫. ইমাম সুফিয়ান সাওরি (রহ.), [জন্ম : ৭১৬ খ্রিস্টাব্দ, মৃত্যু : ৭৭৮ খ্রিস্টাব্দ]

বিদগ্ধ ফকিহ ও মুহাদ্দিস ইমাম সুফিয়ান সাওরি (রহ.) হাদিস সংরক্ষণ, বিন্যস্ত এবং বর্ণনায় এতটাই খ্যাতি অর্জন করেছিলেন যে, শোবাহ বিন হাজ্জাজ, সুফিয়ান বিন উয়াইনা এবং ইয়াহিয়া বিন মঈন (রহ.)-এর মতো জগদ্বিখ্যাত মুহাদ্দিসরা তাকে ‘আমিরুল মুমিনিন ফিল হাদিস’ উপাধি দিয়ে সম্মানিত করেছিলেন। ইমাম আবু হানিফা (রহ.) তার জ্ঞান ও শ্রেষ্ঠত্ব সম্বন্ধে অবগত ছিলেন। তিনি বলেন, সে যদি তাবেইনদের যুগে হতো তাহলে তারও একটি বিশেষ অবস্থান

থাকত। বলা হয়, সমসাময়িক আইনশাস্ত্রে তার চেয়ে বেশি হালাল-হারামের বিষয়ে জানতেন এমন কেউ ছিল না। তাবেইনদের মধ্যে যাদের ফিকাহ ও হাদিসের ইমামদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বলা হতো, তাদের একজন হলেন ইমাম সুফিয়ান সাওরি (রহ.)।

৬. ইমাম আওযায়ি (রহ.), [জন্ম : ৭০৭ খ্রিস্টাব্দ, মৃত্যু : ৭৭৪ খ্রিস্টাব্দ]

সিরিয়ার ইসলামি আইনশাস্ত্রের সর্বশ্রেষ্ঠ ফকিহ হলেন হজরত ইমাম আওযায়ি (রহ.)। তার আসল নাম আবদুল আজিজ, যা তিনি পরিবর্তন করে আবদুর রহমান রাখেন। তিনি দামেস্কের শহরতলি আল-আওযার বাসিন্দা। ৮৮ হিজরিতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন এবং ইয়ামামায় শিক্ষাজীবন শেষে সেখানে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। এরপর তিনি বৈরুতে যান এবং সেখানেই ইন্তেকাল করেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত বাগ্মী ও সাহিত্যিক এবং সিরিয়ার জনগণের মধ্যে তার শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকৃত। আল্লামা যাহাবি (রহ.) তাকে শাইখুল ইসলাম এবং হাফেজ উপাধিতে ভূষিত করেছেন। ইমাম আবু যুরআহ (রহ.) বলেন, ইমাম আওযায়ি (রহ.) ফিকাহ শাস্ত্রের অনেক কিতাব রচনা করেছেন যা ঈর্ষণীয় এবং তিনি ছিলেন সিরিয়ার জনগণের আস্থাভাজন ও গ্র্যান্ড মুফতি।

৭. ইমাম শাফেয়ি (রহ.), [জন্ম : ৭৬৭ খ্রিস্টাব্দ, মৃত্যু : ৮২০ খ্রিস্টাব্দ]

ইমাম শাফেয়ি (রহ.)-এর পুরো নাম মুহাম্মদ বিন ইদ্রিস বিন আল আব্বাস বিন উসমান বিন শাফি আল-কুরাইশি আল-হাশিমি আল-মুত্তালিবি। ১৫০ হিজরিতে ফিলিস্তিনের গাজায় জন্মগ্রহণ করেন এবং ২০৪ হিজরিতে মিসরে মৃত্যুবরণ করেন। গাজায় তার বাবার মৃত্যুর পর ২ বছর বয়সে তার নিজের জন্মভূমি মক্কায় নিয়ে আসেন। ফলে তিনি মক্কায় বেড়ে ওঠেন ও পড়াশোনা করেন। শৈশবে পবিত্র কোরআন মুখস্থ করে মেধার স্বাক্ষর রাখেন। এরপর আরবের অন্যতম অভিজাত গোত্র হুজাইলে চলে যান। সেখানে আরবি কবিতা ও কাসিদা মুখস্থ করেন এবং আরবি সাহিত্যে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেন। মক্কার বড় মুফতি মুসলিম বিন খালিদের শ্রেষ্ঠ ছাত্রের কৃতিত্ব লাভ করেন। তিনি যখন ফতোয়া দেওয়ার অনুমতি দেন, তখন তার বয়স মাত্র ১৫। এরপর তিনি মদিনায় এসে ইমাম মালেক (রহ.)-এর কাছ থেকে ফিকাহ অধ্যয়ন করেন এবং মুয়াত্তার দরস নেন। তিনি মাত্র ৯ দিনে ‘মুয়াত্তা’ মুখস্থ করেন। একইভাবে তিনি সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা, ফাজিল ইবনে আইয়াদ এবং স্বীয় চাচা মুহাম্মাদ ইবনে শাফি (রহ.)-এর থেকে হাদিস বর্ণনা করেন। ২০০ হিজরিতে তিনি মিসরে হিজরত করেন এবং সেখানে তিনি নতুন মাজহাব প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ২০৪ হিজরিতে রজবের শেষ শুক্রবার মিসরে ইন্তেকাল করেন। তার রচিত সংকলনের মধ্যে রয়েছে, ‘আল রিসালাহ’ যা উসুলে ফিকাহ বিষয়ে রচিত এবং ‘আল-উম’ তার বিখ্যাত কিতাব যাতে তার নতুন মাজহাব ‘মাজহাবে শাফেয়ি’-এর কথা উল্লেখ রয়েছে।

৮. ইমাম লাইছ বিন সাদ (রহ.), [জন্ম : ৭১৩ খ্রিস্টাব্দ, মৃত্যু : ৭৯১ খ্রিস্টাব্দ]

মুহাদ্দিস, মুফাসসির, আলেম এবং ফকিহ ইমাম লাইছ বিন সাদ (রহ.) হিজরি দ্বিতীয় শতাব্দীতে মিসরসহ ইসলামি পণ্ডিতদের শিক্ষক হিসেবে ব্যাপকভাবে স্বীকৃত। হাদিস ও ফিকাহ শাস্ত্রে তিনি ছিলেন তার যুগের অগ্রগণ্য আলেমদের একজন। ওই সময়ে প্রায় সব হাদিস বিশারদ তার ছাত্র হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন। ইমাম নববি (রহ.) বলেন, তিনি হাদিস ও ফিকহের ইমাম ছিলেন। পরিতাপের বিষয় হলো, যদি তার ছাত্ররা তার ইজতিহাদ এবং ফিকাহ বিষয়ক মাসয়ালাসমূহ লিখে রাখতেন, তাহলে তিনিও মুজতাহিদ ইমামদের মধ্যে পরিচিতি পেতেন। এ কারণেই ইমাম শাফেয়ি (রহ.) বলেন যে, তার ছাত্ররা তাকে ইতিহাসের পাতা থেকে নিশ্চিহ্ন করেছে অর্থাৎ তারা তার ইলমসমূহ লিপিবদ্ধ করেননি।

৯. ইমাম ইসহাক বিন রাহাবিয়া (রহ.), [জন্ম : ৭৭৮ খ্রিস্টাব্দ, মৃত্যু : ৮৫৩ খ্রিস্টাব্দ] তাবেইনদের সাহচর্যে যারা ধন্য হয়েছেন এবং দ্বীনি শিক্ষার উন্নয়ন ও প্রসারে যারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন তাদের অন্যতম হলেন ইসহাক বিন রাহাবিয়া (রহ.)। তৎকালীন আলেম এবং তার সম-সাময়িকরা তার জ্ঞান ও প্রজ্ঞার স্বীকৃতি দিয়েছেন। তিনি শুধু জ্ঞান ও হাদিসের ক্ষেত্রেই উচ্চ পদমর্যাদা অর্জন করেননি বরং অন্যান্য ক্ষেত্রেও যেমন তাফসির, ফিকাহ, উসুলে ফিকাহ, সাহিত্য ও ভাষা, ইতিহাস-সংস্কৃতি এবং নাহু-সরফেও পারদর্শী ছিলেন। ইমাম খতিবে বাগদাদি (রহ.) [মৃত্যু ৪৬৩ হি.] বলেন, ইমাম ইসহাক বিন রাহাবিয়া (রহ.) হাদিস ও ফিকাহশাস্ত্রে পারদর্শী ছিলেন। তিনি যখন কোরআনের তাফসির করতেন, তখন তিনি তাতেও সনদ উল্লেখ করতেন। ইমাম ইসহাক বিন রাহাবিয়া (রহ.) নিজেই একজন মাজহাব প্রণেতা এবং মুজতাহিদ ছিলেন। তিনি হানাফি, মালেকি, হাম্বলি ও শাফেয়ি নামক কোনো মাজহাবের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না। ইবনে কাসির (রহ.) (৭৭৪ হি.) বলেন, ইসহাক বিন রাহাবিয়া ছিলেন সেই সময়ের একজন ইমাম। একটি দল তার মতানুসারে ইস্তিম্বাত (বাছাই) ও ইজতিহাদ করত। ফিকাহ শাস্ত্রের ওপর তার লিখিত গ্রন্থ ‘কিতাবুস সুনান ফিল ফিকহ’ অন্যতম।

১০. ইমাম আবু সাওর (রহ.), [জন্ম : ৭৬৪ খ্রিস্টাব্দ, মৃত্যু : ৮৬০ খ্রিস্টাব্দ]

তার পুরো নাম আবু সাওর ইবরাহিম বিন খালিদ বিন আবি আল-ইয়ামান আল-কালবি আল-বাগদাদি। ইবনে হিব্বান (রহ.) তার সম্পর্কে বলেন, তিনি তাদের মধ্যে অন্যতম একজন ইমাম ছিলেন যে, সব ইমাম ফিকহ, ইলম, তাকওয়া ও সততার ক্ষেত্রে পুরোবিশ্বে রাজত্ব করেছেন। তিনি তাদের মধ্যে একজন ছিলেন, যারা এসব বিষয়ে কিতাব সংকলন করেছিলেন এবং সুন্নাহের উৎকর্ষ সাধন করেছিলেন।

১১. ইমাম মুহাম্মদ (রহ.), [জন্ম : ৭৫০ খ্রিস্টাব্দ, মৃত্যু : ৮০৫ খ্রিস্টাব্দ]

ইমাম মুহাম্মাদ বিন হাসান আশ-শাইবানি ছিলেন তাবেঈ-তাবেইনদের মধ্যে অন্যতম। তিনি ইমাম শাফেয়ি (রহ.)-এর শিক্ষক এবং ইমামে আজম আবু হানিফা (রহ.)-এর শিষ্য ও বিশেষ উপদেষ্টা। ইমাম আবু ইউসুফ (রহ.)-এর পরে তিনি ছিলেন সেরা ছাত্র। শিক্ষকের চিন্তাধারা ও মতাদর্শ লিপিবদ্ধ করার ক্ষেত্রে তার কঠোর পরিশ্রম বর্ণনাতীত। ফিকহে হানাফির প্রথম সংকলক হিসেবে তিনি সুপ্রসিদ্ধির চূড়ায় আরোহণ করেন। এ ছাড়া তিনি বিদগ্ধ মুজতাহিদ ও মুয়াত্তার রাবি ছিলেন। একজন খ্রিস্টান পণ্ডিত তার সর্বাধিক প্রসিদ্ধ কিতাব ‘আসল’ অধ্যয়ন করে (যা মাবসূত নামে পরিচিত) মন্তব্য করেন, এটি আপনার ছোট্ট মুহাম্মদের গ্রন্থের যদি এত মর্যাদা হয়! তাহলে আপনার বড় মুহাম্মদের কীর্তি কেমন হবে? পরে ওই পণ্ডিত ইসলাম গ্রহণ করেন। ইমাম শাফেয়ি (রহ.) বলেন, আমি হালাল-হারাম ও নাসেখ-মানসুখ সম্পর্কে অধিক জ্ঞানের অধিকারী ইমাম মুহাম্মদ (রহ.)-এর চেয়ে আর কোনো বড় আলেম দেখিনি। তার রচিত ৬টি কিতাবকে ফিকাহের পরিভাষায় ‘কুতুবে সিত্তাহ’ বলা হয়। ওই ৬ কিতাব হলো আসল বা মাবসুত, জামেউস সাগির, সিয়ারুস সাগির, জামিউল কাবির, সিয়ারুল কাবির ও যিয়াদাত।

১২. ইমাম দাউদ জাহরি (রহ.), [জন্ম : ৮১৫ খ্রিস্টাব্দ, মৃত্যু : ৮৮৪ খ্রিস্টাব্দ]

তার পুরো নাম দাউদ বিন আলি বিন খালাফ জাহরি (রহ.)। ইসলামি ইতিহাসের স্বর্ণযুগের অন্যতম মুফাসসির, মুহাদ্দিস এবং ইতিহাসবেত্তা এই আলেম আহলে সুন্নাহর মুজতাহিদ আলেমদের একজন। তার খ্যাতির প্রধান কারণ হলো, ফিকহি মাজহাবে একটি নতুন মানহাজ বা মাসলাক অর্থাৎ ফিকহে জাহরি প্রতিষ্ঠা করা। ইবনে হাযম আল-আন্দুলুসি বলেন, তিনি ইসফাহানি উপাধিতে পরিচিত ছিলেন, কারণ তার মায়ের জন্মভূমি ছিল ইসফাহান এবং তার পিতা ছিলেন একজন হানাফি।

১৩. ইমাম ইবনে জারির তাবারি (রহ.), [জন্ম : ৮৩৯ খ্রিস্টাব্দ, মৃত্যু : ৯২৩ খ্রিস্টাব্দ]
পুরো নাম আবু জাফর মুহাম্মদ বিন জারির বিন ইয়াজিদ আল-তাবারি (ইবনে জারির আল-তাবারি)। আব্বাসীয় যুগের একজন বিখ্যাত মুফাসসির ও ইতিহাসবেত্তা। তাবারিস্তানের বাসিন্দা হওয়ার কারণে তাবারি নামকরণ হয়। এলাকাটি যা মাজেন্দ্রান অঞ্চলের অন্তর্গত বর্তমান ইরান। ইমাম তাবারি (রহ.)-এর কিতাবসমূহের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং জনপ্রিয় হলো তাফসিরগ্রন্থ ‘জামিউল বায়ান আন তাবিল’ (আল-কোরআন) এবং ‘তারিখুল রাসুল ওয়াল মুলুক।’ আগেরটি তাফসিরে তাবারি এবং পরেরটা তারিখে তাবারি নামে পরিচিত। তিনি ফিকহে শাফেয়ির অনুসারী ছিলেন, কিন্তু পরে তার মতামত ও ফতোয়ার ওপর ভিত্তি করে একটি মাসলাক প্রতিষ্ঠিত হয়- যা তারই নাম অনুকরণে জারিরি নামে পরিচিত।

তবে কালের আবর্তে তাদের অধিকাংশের মাজহাব হারিয়ে গেছে। সেগুলোর ইতিহাস-ঐতিহ্য শুধু বইয়ের পাতাতেই শোভা পায়। বর্তমান বিশ্বে প্রভাবশালী চারটি মাজহাবই (হানাফি, মালেকি, শাফেয়ি ও হাম্বলি) সর্বজনীনভাবে গৃহীত।

উল্লেখ্য, ফিকাহ হলো, আল্লাহপ্রদত্ত বিধানসমূহের সুবিন্যস্ত রূপ। এটি কোনো ফকিহের (ইমাম) নিজস্ব মনগড়া মতামত নয়। তাদের নিজেদের মনগড়া মতামত প্রদানের কোনো অনুমতি নেই; বরং তারা কেবল কোরআন-হাদিসে সুপ্ত আইনসমূহকে উম্মতের সামনে বিন্যস্ত করে প্রকাশ করেছেন। মাসয়ালা ও ফতোয়াগুলোকে কোনো নির্দিষ্ট ফকিহ ইমাম আবু হানিফা বা ইমাম মালেক বা ইমাম শাফেয়ি রাহিমাহুমুল্লাহুর দিকে সাধারণত এ জন্যই সম্বন্ধ করা হয় যে, তারা সেগুলো প্রকাশ ও উদঘাটন করেছেন, এ জন্য নয় যে এগুলো তাদের বানানো মতামত।




রোজা যেভাবে ইসলাম ধর্মের পাঁচ ফরজের একটি হয়ে উঠল

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৮ মার্চ, ২০২৩

রোজা যেভাবে ইসলাম ধর্মের পাঁচ ফরজের একটি হয়ে উঠল

ইসলামের নবী নিজে মাঝে মাঝে রোজা রাখলেও শুরুর দিকে উম্মত বা সাহাবীদের জন্য, বিশ্বাসীদের জন্য ৩০ রোজা রাখার বিষয়টি বাধ্যতামূলক ছিল না। ইসলামে রোজা বা রমজান ফরজ হিসাবে বাধ্যতামূলক করা হয় হিজরি দ্বিতীয় বর্ষে। এরপর থেকেই অপরিবর্তিত রূপে সারা পৃথিবীতে রোজা পালন করা হচ্ছে রমজানের মতো না হলেও ইহুদি এবং অন্যান্য আরও অনেক জাতিগোষ্ঠীর মধ্যেও রোজার মতো সারাদিন পানাহার না করার ধর্মীয় রীতি দেখা যায় তবে ইসলামের প্রধান পাঁচটি ধর্মীয় স্তম্ভের একটি হচ্ছে রোজা। অন্য চারটি ফরজ হচ্ছে ঈমান, নামাজ, যাকাত, হজ্জ।

কখন ও কীভাবে রোজা ইসলামের অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ হয়ে উঠলো?

মক্কা-মদিনায় আগে থেকেই ছিল রোজার রীতি যে বছর রোজা ফরজ করা হয়েছিল, তার দুই বছর আগে ৬২২ খৃষ্টাব্দে মক্কা থেকে সাহাবীদের নিয়ে মদিনায় হিজরত করেন ইসলামের নবী। হিজরতের তারিখ থেকে মুসলিমদের হিজরি সাল গণনা শুরু করা হয়। হিজরি দ্বিতীয় বছরে রমজান মাসে রোজা রাখা বাধ্যতামূলক বা ফরজ ঘোষণা করে আয়াত নাজিল হয় বলে ইসলাম বিশেষজ্ঞরা বলছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামী শিক্ষা বিভাগের অধ্যাপক ড. শাসুল আলম বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ‘’কোরানে যে আয়াত দিয়ে রোজা ফরজ করা হয়েছে, সেখানে বলা হয়েছে যে, পূর্ববর্তী জাতিসমুহের ওপরেও রোজা ফরজ ছিল।"

"তার মানে এটা বোঝা যায় যে, আগে থেকেই বিভিন্ন জাতির মধ্যে রোজা রাখার চল ছিল, যদিও সেটার ধরন হয়তো আলাদা ছিল। যেমন ইহুদিরা এখনো রোজা করে, অন্যান্য জাতির মধ্যেও এ ধরনের রীতি আছে।‘’

সেই সময় মক্কা বা মদিনার বাসিন্দারা কয়েকটি তারিখে রোজা রাখতেন। অনেকে আশুরার দিনে রোজা রাখতেন। আবার কেউ কেউ চান্দ্র মাসের ১৩,১৪ ও ১৫ তারিখে রোজা রাখতেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ আতাউর রহমান মিয়াজি বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ‘’অন্যান্য পয়গম্বরদের জন্য রোজা ফরজ ছিল, তবে সেটা একমাস ব্যাপী ছিল না, ছিল আংশিকভাবে।"

"ইসলামের নবীও মক্কায় থাকার সময় চান্দ্র মাসের তিনদিন করে সিয়াম সাধনা করতেন, যা হিসাব করলে বছরে ৩৬ দিন হয়। অর্থাৎ সেখানে আগে থেকেই রোজা রাখার বিধান ছিল।‘’

ইসলামের ইতিহাস উল্লেখ করে তিনি বলেন, নবী আদমের সময় মাসে তিনদিন, নবী দাউদের সময় একদিন পরপর রোজা রাখা, নবী মুসার সময় প্রথমে তুর পাহাড়ে তিনি ৩০দিন রোজা রাখেন। পরবর্তীতে আরও ১০দিন যোগ করে একটানা ৪০ দিন তিনি রোজা রেখেছিলেন।

ইসলামের নবী ৬২২ খৃষ্টাব্দে মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার পর মদিনাবাসীকে আশুরার দিনে রোজা রাখতে দেখেন। এরপর তিনিও সেই রোজা রাখতে শুরু করেন।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মোফাচ্ছির এবং উপ-পরিচালক ড. মোঃ আবু ছালেহ পাটোয়ারী বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ‘’পূর্ববর্তী নবীদের ওপর ৩০ রোজা ফরজ ছিল না। কোন কোন নবীর ওপর আশুরার রোজা ফরজ ছিল, কোন কোন নবীর ওপর আইয়ামুল বিজের (চন্দ্র মাসের ১৩,১৪,১৫) রোজা ফরজ ছিল।‘’

তিনি বলছেন, ‘’রসুল (সাঃ) মক্কায় থাকার সময় ফরজ রোজা রাখতেন, এমন তথ্য পাওয়া যায় না। মদিনায় হিজরত করার পরে যখন তিনি দেখলেন যে, মদিনার লোকজন আশুরার তারিখে রোজা রাখছে। তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন যে, তোমরা কেন রোজা রাখো? তারা বলল, এই দিনে মুসা (আঃ)কে আল্লাহ ফেরাউনের কবল থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন বলে আমরা রোজা রাখি।‘’

‘’নবীজী বললেন, মুসা (আঃ) এর জন্য হলে তো তোমাদের চেয়ে আমি বেশি হকদার। তখন তিনিও রোজা রাখলেন এবং সাহাবীদেরও রাখতে বললেন। সেই সঙ্গে তিনি বললেন, আগামী বছর বেঁচে থাকলে আমি দুই দিনেই রোজা রাখবো।‘’

তবে তিনি নফল রোজা হিসাবে আগে থেকেই আইয়ামুল বিজের বা চাঁদের ১৩.১৪,১৫ তারিখে রোজা রাখতেন বলে বলছেন ড. পাটোয়ারি।

ইসলাম ধর্মের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নবী আদমের সময় আইয়ামুল বিজের (চান্দ্র মাসের তিনদিন) রোজা রাখা হতো। আরেক নবী মুসার আমলে আশুরার রোজা রাখা হতো। আরব দেশগুলোতে এই দুই ধরনের রোজা রাখার চল ছিল। তবে ৩০ দিনের রোজা শুধুমাত্র ইসলামের নবী মোহাম্মদের আমল থেকে ফরজ করা হয়।

ড. মোঃ আবু ছালেহ পাটোয়ারী বলছেন, এই দুই রোজাই ইসলামের নবী নফল হিসাবে রাখতেন। হিজরি দ্বিতীয় বর্ষের আগে ফরজ (বাধ্যতামূলক) হিসাবে কোন রোজা রাখেননি।

হিজরি দ্বিতীয় বর্ষে বা ৬২৪ খৃষ্টাব্দে কোরানের আয়াতের মাধ্যমে মুসলমানদের জন্য রোজা ফরজ করা হয়।

তবে বিশেষ কোন ঘটনা বা পরিস্থিতির কারণে রোজা বাধ্যতামূলক করা হয়নি। বরং ইসলামের বিধিবিধানের অংশ হিসাবেই সেটা ফরজ করা হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন।

ড. পাটোয়ারি বলছেন, "কোরানের যে সুরা বা আয়াতগুলো ইসলামের নবীর মক্কায় থাকার সময় নাজিল হয়েছে, সেগুলোয় আকিদা, ইমান, একাত্মবাদের বিষয় গুরুত্ব পেয়েছে। আবার মদিনায় নাজিল হওয়া সুরাগুলোয় ধর্মের নানা বিধিবিধান নাজিল হয়েছে। তার একটি হচ্ছে রোজা।"


রোজার নিয়মে পরিবর্তন

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মোফাচ্ছির এবং উপ-পরিচালক ড. মোঃ আবু ছালেহ পাটোয়ারী বলছেন, ''প্রাথমিক অবস্থায় রোজা ধাপে ধাপে সহনীয় করে তোলা হয়েছিল। রোজা ফরজ করা হলেও কেউ যদি মনে করতেন যে, তিনি রোজা রাখতে পারবেন না, ইচ্ছা করলে তিনি ফিদইয়া দিয়ে দিতে পারতেন। (এর অর্থ হলো প্রতিটা রোজার বিনিময়ে নির্দিষ্ট পরিমাণের জম বা তার মূল্য গরিবদের দান করে দেয়া।) "

"এটা সাময়িকভাবে কিছুদিন ছিল, তবে পরবর্তীতে সেটা সবার ফরজ করে দেয়া হয় যে, রোজার মাস উপস্থিত হলে সবাইকে রোজা রাখতে হবে।‘’

ড, পাটোয়ারী বলছেন, ‘’এরপরে আবার আল্লাহ পাক নির্দেশ দিলেন, সন্ধ্যা থেকে এশার আজানের মধ্যবর্তী সময়ে খাবার-দাবার বা অন্যসব কাজ করতে হবে। এশার আজান হয়ে গেলে পরের দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত আর খাওয়া যেতো না। কিন্তু এতেও সাহাবীদের অনেকের কষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। খাবার খেতে খেতে এশার আজান হয়ে গেছে।"

"এরকম দুইটি ঘটনা ঘটে। এরপর আল্লাহ পাক, তাদের কষ্টের কথা বুঝে আয়াত নাজিল করলেন যে, এখন থেকে সুবেহ সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজা রাখবে। এই বিধানটি পরবর্তীতে চূড়ান্ত হয়ে গেছে,’’ বলছেন মোফাচ্ছির ড. মোঃ আবু ছালেহ পাটোয়ারী।

এইসব পরিবর্তন দ্বিতীয় হিজরিতেই রোজা ফরজ করার রমজান মাসেই হয়েছিল।

সেই সময় রোজা শুরুর আগে ও পরে মূলত খেজুর, পানি, মাংস ও দুধ খাওয়া হতো বলে ইতিহাসবিদরা জানিয়েছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামী শিক্ষা বিভাগের অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলছেন, তখন আরবের মানুষ সেহরি এবং ইফতারে অনেকটা একই ধরনের খাবার খেতেন, যার মধ্যে রয়েছে খেজুর, জমজমের পানি। কখনো কখনো উট বা দুম্বার দুধ এবং মাংসও খাওয়া হতো।


হজযাত্রী নিবন্ধনের সময়সীমা বাড়ছে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০৯ ডিসেম্বর, ২০২৩

হজযাত্রী নিবন্ধনের সময়সীমা বাড়ছে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত

বার্তাবেলা: হজের নিবন্ধনের সময় আরও ২১ দিন বাড়ানো হচ্ছে। আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত হজযাত্রী নিবন্ধন করা যাবে। নিবন্ধনের সময় বাড়িয়ে রোববার (১০ ডিসেম্বর) ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে জানা গেছে।

জানা গেছে, চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী বছরের ১৬ জুন (১৪৪৫ হিজরি সনের ৯ জিলহজ) পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। চলতি বছরের মতো আগামী বছরও (২০২৪ সাল) বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ করতে পারবেন। এর মধ্যে সরকারি মাধ্যমে কোটা ১০ হাজার ১৯৮ জন ও বেসরকারি এজেন্সির কোটা এক লাখ ১৭ হাজার জন হজ পালন করতে পারবেন বলে ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়।

আগামী বছর (২০২৪ সাল) হজে যেতে সরকারি-বেসরকারি হজযাত্রীদের নিবন্ধন শুরু হয় গত ১৫ নভেম্বর। নিবন্ধনের সময় শেষ হওয়ার কথা রোববার। আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রাক-নিবন্ধিত সব হজযাত্রী নিবন্ধন করতে পারবেন। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় সর্বশেষ নিবন্ধনের ক্রমিক ৯১০০৯৬।

কিন্তু শনিবার পর্যন্ত পাঁচ শতাংশ হজযাত্রীও নিবন্ধিত হয়নি।

ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হজ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মতিউল ইসলাম শনিবার জাগো নিউজকে বলেন, ‘হজের নিবন্ধনের সময় ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হবে। রোববার এ বিষয়ে নোটিশ জারি করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘এরপর হয়তো আমাদের আর নিবন্ধনের সময় বাড়ানো সম্ভব হবে না। ওই সময় পর্যন্ত যারা নিবন্ধন করবেন, তারাই এবার হজ পালন করতে পারবেন।’

হজ এজেন্সি মালিকরা জানান, আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচন, অনেকেই নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত। আর চলছে টানা অবরোধ ও হরতাল। বেশির ভাগ মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থাও খুব একটা ভালো না। অন্যদিকে গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে হজযাত্রী নিবন্ধন শুরু হয়েছিল, নিবন্ধন চলে এপ্রিল পর্যন্ত। কিন্তু এবার সৌদি সরকার হজ ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনায় হজ চুক্তির আগেই হজের নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হচ্ছে। আগেভাগে নিবন্ধনের তথ্য অনেকে জানেনও না। তাই এবার নিবন্ধনে খুবই ধীরগতি।