শেয়ার বাজার

কবর জিয়ারতের দোয়া ও নিয়ম

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: শনিবার, ৬ এপ্রিল ২০২৪

কবর জিয়ারতের দোয়া ও নিয়ম

কবর মানুষকে মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। মৃত্যুর চিন্তা আত্মাকে বিদগ্ধ করে। ভেসে ওঠে পরকালীন জীবন তথা জান্নাত কিংবা জাহান্নামের কথা। যা মানুষকে দুনিয়া বিমুখতা এনে দেয় এবং আখিরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।  মানুষের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে তার আমলনামা বন্ধ হয়ে যায়। তাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাাইহি ওয়া সাল্লাম মৃত ব্যক্তির প্রতি সাওয়াব পাঠানোর আবেদন হিসেবে সাহাবিদের কিছু দোয়া শিখিয়েছেন। যা তারা কবর জিয়ারতের সময় পড়তেন।

ফলে পরকালমুখী জীবনযাপনের প্রতি মানুষ আত্মতাড়িত হয়। একই সঙ্গে তাওবা করে গুনাহমুক্ত থেকে বেঁচে থাকার মানসিকতা তৈরি হয়। আগ্রহ জন্মে সৎ আমলের প্রতি। ইসলামের শুরুর দিকে কবর জিয়ারতের অনুমতি না থাকলেও পরে হজরত মুহাম্মদ (সা.) কবর জিয়ারতের অনুমতি দেন।

কবর জিয়ারতের নিয়ম

কবরস্থানে সর্বপ্রথম জিয়ারতের দোয়া পড়া। এরপর কবরবাসীর ইসালে সওয়াবের নিয়তে দরুদ শরিফ ও বিভিন্ন সুরা ইত্যাদি আদায় করা। মৃতের বা কবরবাসীর মাগফিরাতের জন্য দোয়া করা।

কবর জিয়ারতের ফজিলত

হাদিসে কবর জিয়ারতের ক্ষেত্রে কিছু সুরার বিশেষ ফজিলতের কথা উল্লেখ আছে। এমনকি দরুদ শরিফের ফজিলতের কথাও রয়েছে। তাই দরুদ শরিফ, সুরা ফাতিহা, সুরা ইখলাস, আয়াতুল কুরসি ও অন্য যেসব সুরা সহজ মনে হয়, সেগুলো আদায় করা।

ঈদের নামাজের পর কবরস্থানে যে দোয়া করবেন

কবর জিয়ারত করা বছরের যে কোনো দিন যেকোনো সময় জায়েজ আছে। তবে কেউ যদি বিশেষ কোনো দিন বা রাতকে জিয়ারতের জন্য নির্ধারণ করে নেয় এবং সবসময় সেভাবেই করে তাহলে তা বিদ’আত হিসেবে পরিগণিত হবে।

যেমন দু ঈদের দিন, জুমার দিন, শবে কদর বা কথিত শবে বরাতের ইত্যাদি।

কবর জিয়ারতের সুন্নতি নিয়ম হলো, প্রত্যেক ব্যক্তি যার যখন সুবিধা হবে তখন কবরের সন্নিকটে গিয়ে কিবলামুখী হয়ে দুই হাত উত্তোলন করে অথবা না করে মৃত ব্যক্তিদের জন্য দোয়া করবে। এর আগে কবরে গিয়ে সালামের সুন্নতি দোয়া পাঠ করবে।

উল্লেখ্য যে, অধিক বিশুদ্ধ মতানুসারে মহিলাদের জন্য কবরস্থানে গিয়ে কবর জিয়ারত করা ঠিক নয়। তবে তারা বাড়ি থেকেই মৃতদের জন্য দোয়া করবে।

কবর সামনে রেখে দুই হাত তুলে দোয়া করা উচিত নয়। তাই কবরকে পেছনে রেখে কিংবা কবরের দিকে পিঠ দিয়ে এরপর কিবলামুখী হয়ে দোয়া করতে হবে। আবার কেউ চাইলে হাত না তুলে মনে মনেও দোয়া করতে পারেন, তাতে জিয়ারত হয়ে যাবে।

সুনানে ইবনে মাজাহতে উল্লিখিত এক হাদিসে তিনি বলেন, ‘তোমাদের কবর জিয়ারতে নিষেধ করেছিলাম। এখন থেকে কবর জিয়ারত করো। কেননা, তা দুনিয়া বিমুখতা এনে দেয় এবং আখিরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।’

কবর জিয়ারতের দোয়া

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনার কবরবাসীর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় যে দোয়াটি তিনি পাঠ করেন তা হলো—

السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ يَا أَهْلَ الْقُبُورِ يَغْفِرُ اللَّهُ لَنَا وَلَكُمْ أَنْتُمْ سَلَفُنَا وَنَحْنُ بِالأَثَرِ

বাংলা উচ্চারণ : ‘আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কুবুর; ইয়াগফিরুল্লাহু লানা ওয়ালাকুম, আনতুম সালাফুনা ওয়া নাহনু বিল আছার।’

অর্থ : হে কবরবাসী! তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আল্লাহ আমাদের এবং তোমাদের ক্ষমা করুন, আমাদের আগে তোমরা কবরে গেছ এবং আমরা পরে আসছি। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১০৫৩)

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) একটি কবর জিয়ারতে গিয়ে বলেন,

السَّلامُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمٍ مُؤمِنينَ وإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لاحِقُونَ

বাংলা উচ্চারণ : আসসালামু আলাইকুম দার ক্বাওমিম মুউমিনি না ওয়া ইন্না ইনশাআল্লাহু বিকুম লাহিকুনা। 

অর্থ : মুমিন ঘরবাসীর ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। ইনশাআল্লাহ, আমরা আপনাদের সঙ্গে মিলিত হবো। (সহিহ মুসলিম : ২৪৯)

হাদিসে এসেছে, হজরত বুরায়দা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের এ দোয়া শিক্ষা দিতেন; যখন তারা কবর জিয়ারাতে বের হতেন-

اَلسَّلاَمُ عَلَيْ أَهْلِ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ وَ الْمُسْلِمِيْنَ وَ يَرْحَمُ اللهُ الْمُسْتَقْدِمِيْنَ وَ الْمُسْتَأْخِرِيْنَ وَ اِنَّا اِنْ شَاءَ اللهُ بِكُمْ لَلَاحِقُوْنَ

উচ্চারণ: আসসালামু আলা আহলিদদিয়ারি মিনাল মুমিনিনা ওয়াল মুসলিমিনা ওয়া ইয়ারহামুল্লাহুল মুসতাক্বদিমিনা ওয়াল মুসতাখিরিনা ওয়া ইন্না ইনশাআল্লাহু বিকুম লালাহিকুন। (মুসলিম, মিশকাত)

অর্থ: মুমিন ও মুসলিম কবরবাসীদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আমাদের মধ্য থেকে যারা আগে (মারা) গেছেন এবং যারা পরে (মারা) যাবেন, তাদের ওপরও আল্লাহ দয়া করুন। আল্লাহর ইচ্ছায়, আমরাও শিগগিরই তোমাদের সঙ্গে মিলিত হবো।

اَلسَّلاَمُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ وَ الْمُسْلِمِيْنَ وَ اِنَّا اِنْ شَاءَ اللهُ بِكُمْ لَلَاحِقُوْنَ نَسْأَلُ اللهَ لَنَا وَ لَكُمُ الْعَافِيْةَ

উচ্চারণ: আসসালামু আলা আহলাদদিয়ারি মিনাল মুমিনিনা ওয়ালমুসলিমিনা ওয়া ইন্না ইনশাআল্লাহু বিকুম লালাহিকুনা নাসআলুল্লাহা লানা ওয়া লাকুমুল আ’ফিয়াতা। (মুসলিম, মিশকাত)

অর্থ: মুমিন ও মুসলিম কবরবাসীদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আল্লাহর ইচ্ছায়, নিশ্চয়ই আমরাও শিগগিরই তোমাদের সঙ্গে মিলিত হবো। আমরা তোমাদের জন্য এবং আমাদের জন্য আল্লাহর কাছে নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি।

তবে নিচের দোয়াটি বহুল প্রচলিত। হাদিসের সনদের ব্যাপারে অনেকেই এটিকে দুর্বল বলেছেন-

اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ يَا اَهُلَ الْقُبُوْرِ يَغْفِرُ اللهُ لَنَا وَلَكُمْ اَنْتُمْ سَلَفُنَا وَ نَحْنُ بِالْاَثَرِ

উচ্চারণ: আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কুবুরি ইয়াগফিরুল্লাহু লানা ওয়া লাকুম; আংতুম সালাফুনা ওয়া নাহনু বিলআছারি।

অর্থ: হে কবরবাসী! তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আল্লাহ তোমাদের এবং আমাদের ক্ষমা করুন। তোমরা আমাদের অগ্রগামী আমরা তোমাদের অনুগামী।

কবরের কথা স্মরণ হলে কিংবা কবরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় এ দোয়া করা মুসলিম উম্মাহর জন্য জরুরি। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নিজের এবং মৃত ব্যক্তির কল্যাণ কামনায় দোয়াগুলো পড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Dummy Ad 1

হজের দিনগুলোতে যা করণীয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৮ মে, ২০২৩

হজের দিনগুলোতে  যা করণীয়

হজের প্রথম দিন

[মিনার উদ্দেশে যাত্রা]

৮ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ পর্যন্ত এ পাঁচ দিনকে হজের দিন বলা হয়। আপনি যদি তামাত্তু হজ পালনকারী হয়ে থাকেন তাহলে আজ আগের মতো আবার ইহরাম বেঁধে নিন। তারপর এভাবে ইহরামের নিয়ত করুন : ‘হে আল্লাহ আমি তামাত্তু হজ করতে ইচ্ছা করেছি, আপনি এ হজ আমার জন্য সহজ করে দিন এবং আমার পক্ষ থেকে কবুল করুন।’ নিয়তের সঙ্গে সঙ্গে তিনবার তালবিয়া একটু উচ্চস্বরে পড়ুন। (মহিলারা নিচু স্বরে পড়ুন)। যারা কিরান বা ইফরাদ হজ পালন করার নিয়ত করেছেন, তারা তো আগে থেকেই ইহরামের অবস্থায় আছেন, কাজেই নতুন করে ইহরাম বাঁধতে হবে না। ৮ জিলহজ সকালে ইহরাম বাঁধা অবস্থায় মিনার উদ্দেশে রওনা হবেন। আজকের জোহর, আসর, মাগরিব, এশা এবং ৯ জিলহজের ফজরের নামাজ মিনায় আদায় করা এবং রাতে মিনায় অবস্থান করা সুন্নাত।

হজের দ্বিতীয় দিন

[আরাফায় অবস্থান]

হজের দ্বিতীয় দিন ৯ জিলহজ আরাফায় অবস্থান ফরজ। ফজরের নামাজ মিনায় পড়ে আরাফার ময়দানের দিকে রওনা করতে হয়। প্রয়োজনে ফজরের আগে রাতেও আরাফার উদ্দেশে রওনা করা যাবে। আরাফার ময়দানে দুপুর ১২টার পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করতে হবে। আরাফার ময়দানে দোয়া কবুল হয়। সুতরাং এ সময় সবাইকে দোয়ায় মগ্ন থাকা উচিত। আরাফার ময়দানে জাবালে রহমতের কাছাকাছি অবস্থান করা ভালো। জোহর এবং আসরের নামাজ মসজিদে নামিরায় জামাতের সঙ্গে নির্দিষ্ট শর্তানুসারে আদায় করা উত্তম। তবে ওই জামাতে শরিক হওয়া সম্ভব না হলে যথাসময়ে জোহরের ওয়াক্তে জোহর এবং আসরের ওয়াক্তে আসর নিজ নিজ তাঁবুতে আজান-ইকামতসহকারে জামাতের সঙ্গে পড়ুন।

মুজদালিফায় অবস্থান

মিনা ও আরাফার মাঝখানে অবস্থিত ময়দানের নাম মুজদালিফা। এখানে ১০ জিলহজ রাত (৯ জিলহজ দিবাগত রাত) অতিবাহিত করা হাজিদের জন্য জরুরি। মুজদালিফায় পৌঁছে এশার ওয়াক্ত হলে এক আজান ও এক ইকামতে প্রথমে মাগরিবের ফরজ তারপর এশার ফরজ পড়ুন এরপর মাগরিবের ও এশার সুন্নাত এবং বেতর পড়ুন। মাগরিব ও এশার নামাজ পড়ার পর সুবহে সাদিক পর্যন্ত মুজদালিফায় অবস্থান করা সুন্নাতে মুআক্কাদাহ্। সুবহে সাদিক থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত অবস্থান ওয়াজিব। এ রাতে জাগ্রত থাকা ও ইবাদতে নিমগ্ন হওয়া মুস্তাহাব।

হজের তৃতীয় দিন

[পাথর নিক্ষেপ, কুরবানি, চুল মুণ্ডন ও তাওয়াফ]

হজের তৃতীয় দিন ১০ জিলহজ মিনায় পৌঁছার পর এ দিনের চারটি কাজ ধারাবাহিকভাবে পালন করতে হবে-

পাথর নিক্ষেপ করা : এই দিনের প্রথম কাজ হলো জামারায় আকাবায় গিয়ে সাতটি পাথর নিক্ষেপ করা (ওয়াজিব)। পাথর নিক্ষেপের নিয়ম হচ্ছে-পাথর নিক্ষেপের সময় মিনাকে ডান দিকে রেখে দাঁড়ান। তর্জনী ও বৃদ্ধাঙ্গুলি দ্বারা পাথর ধরে নিক্ষেপ করুন। প্রথম পাথর নিক্ষেপের আগমুহূর্ত থেকে তালবিয়া পড়া বন্ধ করে দিতে হবে। পাথর নিক্ষেপের সময় বলুন : বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার।

কুরবানি করা : এই দিনের দ্বিতীয় কাজ হলো দমে শোকর বা হজের শোকরিয়া স্বরূপ কুরবানি করা (ওয়াজিব)। নিজ হাতে করুন কিংবা কাউকে পাঠান; কিন্তু জবাই হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হোন।

চুল মুণ্ডন বা কর্তন করা : এই দিনের তৃতীয় কাজ হলো হলক বা কসর করা। (চুল মুণ্ডন বা কর্তন) এটি ওয়াজিব। কুরবানি করার পর পুরো মাথার চুল মুণ্ডন করে ফেলুন। মুণ্ডনকারীদের জন্য হুজুর পাক (সা.) তিনবার দোয়া করেছেন। তাই এতে ফজিলত বেশি।

তাওয়াফে জিয়ারত : এ দিনের চতুর্থ কাজ হলো তাওয়াফে জিয়ারত (ফরজ)। এটা হজের শেষ রুকন। মিনায় উপরোক্ত কাজগুলো সেরে হাজিরা মক্কা শরিফ গিয়ে তাওয়াফ-ই-জিয়ারত করবেন। এ তাওয়াফে ইজতিবা নেই। ১০ তারিখে সম্ভব না হলে ১১ বা ১২ তারিখের সূর্যাস্তের আগে অবশ্যই এ তাওয়াফ করতে হবে। যারা মক্কা থেকে ৮ জিলহজ আসার আগে একটি নফল তাওয়াফের সঙ্গে সায়ী করে আসেনি তাওয়াফে জিয়ারতে তাদের অবশ্যই সায়ী করতে হবে। তাওয়াফে জিয়ারতের কোনো বদলা নেই, এ তাওয়াফ করতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।

হজের চতুর্থ দিন

[মিনায় রাতযাপন এবং পাথর নিক্ষেপ]

১১ জিলহজ মিনায় রাতযাপন সুন্নাত। এদিন মিনায় তিন শয়তানকে পাথর মারা ওয়াজিব। দুপুরের পর প্রথমে জামারায়ে সুগরা, (মসজিদে খাইফের সন্নিকটে) অতঃপর জামারায়ে উসতা, সর্বশেষ জামারায়ে আকাবায় ৭টি করে মোট ২১টি পাথর নিক্ষেপ করতে হবে। প্রত্যেকটি পাথর নিক্ষেপের সময় তাকবির বলবেন।

হজের পঞ্চম দিন

[মিনায় রাতযাপন এবং পাথর নিক্ষেপ]

১২ জিলহজেও আগের দিনের মতো তিন জামারায় পাথর নিক্ষেপ করা ওয়াজিব। অনেকেই ১২ জিলহজ তাড়াতাড়ি মক্কায় ফিরে যাওয়ার জন্য সূর্য মাথার ওপর উঠার আগেই পাথর নিক্ষেপ করে ফেলেন, অথচ এরূপ করা নাজায়েজ। মনে রাখতে হবে, সূর্য মাথার ওপর থেকে কিছুটা ঢলে যাওয়ার পর পাথর নিক্ষেপ করতে পারবেন। ১২ জিলহজ পাথর নিক্ষেপ করে মক্কায় ফিরে যাওয়া জায়েজ, তবে ১৩ জিলহজ পাথর নিক্ষেপ করে তারপর মক্কায় ফিরে যাওয়া উত্তম। ১২ জিলহজ পাথর নিক্ষেপ করে মক্কায় ফিরতে চাইলে সূর্যাস্তের আগেই মিনা থেকে বের হয়ে যাবেন। সূর্যাস্তের পর ফিরা মাকরুহ।

মক্কায় পৌঁছার পর বিদায়ী তাওয়াফ ছাড়া হজের আর কোনো জরুরি কাজ বাকি নেই। হজ আদায়ের তাওফিকদানের জন্য আল্লাহ পাকের শোকর, নফল তাওয়াফ, উমরাহ ও অন্যান্য ইবাদত করতে থাকুন।

বিদায়ী তাওয়াফ

মক্কা শরিফ থেকে বিদায়ের আগে বিদায়ী তাওয়াফ (ওয়াজিব) করুন। মাকামে ইবরাহিমে দুরাকাত নামাজ পড়ে মূলতাযাম, কাবার দরজা ও হাতিমে দোয়া করুন; যমযমের পানি পান করেও দোয়া করুন এবং বিয়োগ-বিরহের বেদনা দিয়ে কাবা ঘর থেকে বিদায় নিন। তাওয়াফে বিদা না করলে দম দিতে হবে।


নামাজের কেরাতে ভুল হয়ে গেলে করণীয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪

নামাজের কেরাতে ভুল হয়ে গেলে করণীয়

নামাজে কেরাত অর্থাৎ কোরআন থেকে কিছু আয়াত পড়া ফরজ। আল্লাহ নামাজে কোরআন পড়ার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন,

فَاقۡرَءُوۡا مَا تَیَسَّرَ مِنَ الۡقُرۡاٰنِ

তোমরা কোরআন থেকে যতটুকু সহজ হয় ততটুকু পড়। (সুরা মুজ্জাম্মিল: ২০)

নামাজে প্রতি রাকাতে কেরাত পড়া ফরজ। সুরা ফাতেহা পড়া ও সুরা মেলানো ওয়াজিব। সামর্থ্য থাকার পরও কেউ যদি কোনো রাকাতে কুরআন থেকে কিছুই না পড়ে, তাহলে ওই রাকাতটি পূর্ণ হবে না। ভুল করে সুরা ফাতেহা বা ফাতেহা-পরবর্তী কেরাত না পড়লে সাহু সিজদা দিতে হবে। সাহু সিজদা না দিলে নামাজ আবার পড়া ওয়াজিব হবে।

নামাজে কেরাত পড়তে গিয়ে নামাজ আদায়কারী যদি ভুল করে, তাহলে দেখতে হবে ভুলটি কোন পর্যায়ের বা কতটা গুরুতর? কেরাতের সাধারণ ভুলে নামাজ নষ্ট হয় না। আয়াতের বক্তব্য পুরোপুরি পরিবর্তিত হয়ে যায় এবং ইমান-বিরোধী কোনো অর্থ সৃষ্টি হয় এ রকম গুরুতর ভুল করলে নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে। তবে ভুল করার পর ওই রাকাতেই মুসল্লির লোকমা শুনে বা নিজে থেকেই ইমাম বা একা নামাজ আদায়কারী যদি ভুল ঠিক করে আয়াতটি শুদ্ধভাবে পড়ে, তাহলে নামাজ শুদ্ধ হবে। ওই রাকাতে আয়াতটি শুদ্ধ না করলে নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে। পরবর্তী রাকাতে শুদ্ধ করে পড়লেও নামাজ শুদ্ধ হবে না।

গুরুতর ভুলের উদাহরণ হলো, কোরআনে আল্লাহ বলেছেন,

فَاَمَّا مَنۡ ثَقُلَتۡ مَوَازِیۡنُهٗ فَهُوَ فِیۡ عِیۡشَۃٍ رَّاضِیَۃٍ

অর্থ: যার নেকের পাল্লা ভারি হবে, সে সুখী জীবন যাপন করবে। (সুরা কারিয়া: ৬, ৭)

কেউ যদি নামাজের কেরাতে আয়াতটিকে পরিবর্তন করে এ রকম পড়ে,

فاما من ثقلت موازینه فامه هاویه

অর্থ: যার নেকের পাল্লা ভারি হবে, তার আবাস হবে হাবিয়া।

তাহলে অর্থ পুরোপুরি বিপরীত ও ইমান বিরোধী হয়ে যাওয়ায় এটা গুরুতর ভুল গণ্য হবে এবং ওই রাকাতে ভুলটি শুদ্ধ না করলে নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে।


ঈদ সালামি বলে যাকাত দেওয়া জায়েজ কি ??

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০৬ এপ্রিল, ২০২৪

ঈদ সালামি বলে যাকাত দেওয়া জায়েজ কি ??

যাকাত আদায় হওয়ার জন্য জাকাতদাতার নিয়ত জরুরি, জাকাত গ্রহণকারীর জানা জরুরি নয় যে তাকে জাকাত দেওয়া হচ্ছে। তাই ঈদ সালামি বলে জাকাত গ্রহণের উপযুক্ত ব্যক্তিকে জাকাত আদায়ের নিয়তে টাকা দিলে তা জাকাত হিসেবে আদায় হয়ে যাবে। (রদ্দুল মুহতার: ২/২৬৮)

একইভাবে জাকাত আদায়ের উপযুক্ত ব্যক্তির অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানদেরও ঈদের সালামি হিসেবে জাকাত দিলে জাকাত আদায় হয়ে যাবে যদি ওই টাকা ওই ব্যক্তির কাছে পৌঁছবে তা নিশ্চিত থাকে এবং অনর্থক কাজে নষ্ট হওয়ার ভয় না থাকে।

জাকাত ইসলামের পাঁচ রোকনের একটি। প্রত্যেক সম্পদশালী মুসলমানের অন্যতম ফরজ কর্তব্য হলো, প্রতি বছর তার বর্ধনশীল সম্পদের চল্লিশ ভাগের এক ভাগ দান করে দেওয়া। আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমরা নামাজ কায়েম কর ও জাকাত দাও এবং যে নেক আমল তোমরা নিজদের জন্য আগে পাঠাবে, তা আল্লাহর কাছে পাবে। তোমরা যা করছ নিশ্চয় আল্লাহ তা দেখেন। (সুরা বাকারা: ১১০)